নিজস্ব প্রতনিধি: সাতক্ষীরার শ্যামনগরে জলবায়ু বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও ক্ষয়ক্ষতি পূরণে অর্থায়নের জন্য গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (১৯ নভেম্বর) বেলা ১১টায় উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে অক্সফাম এর আয়োজনে এবং সুইডেন সারভিজ, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স ও সিএনআরএস এর সহযোগিতায় এই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
শুনানিতে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস.এম আতাউল হক দোলন।
ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স এর সাতক্ষীরা অফিস ইনচার্জ মো. শরিফুল ইসলাম এর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আক্তার হোসেন, অক্সফাম বাংলাদেশ এর প্রোগ্রাম হেড মাহমুদা সুলতানা, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স এর কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অসীম কুমার জোয়ারদার, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের বিট ইনচার্জ এস.আই পিংকু কুমার মন্ডল, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জি.এম আব্দুর রউফ প্রমুখ।
গণশুনানিতে অংশ নিয়ে স্থানীয় গৃহিনী জোৎস্না রাণী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার নারীরা জরায়ু ক্যানসারসহ নানাবিধ সমস্যায় ভুগছে।
ঘের ব্যবসায়ী ঠাকুরদাস মন্ডল বলেন, নদীভাঙনের কারণে আমাদের চিংড়ি ঘেরগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। আমাদের টেকসই বেড়িবাঁধ খুবই প্রয়োজন।
সমাজসেবক রুহিত দাস মিস্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হয়। এতে চলাচলের রাস্তাগুলো প্রায়ই নষ্ট হয়ে যায়।
বনজীবী মোস্তফা আল মামুন বলেন, আমরা বনের উপর নির্ভরশীল। বনের পাশ পারমিট যখন বন্ধ থাকে, তখন আমরা ঘের করে খাই। কিন্তু এখন বেড়িবাঁধ ভেঙে বছরে ২-৩ বার প্লাবিত হওয়ায় মৎস্য চাষ হুমকির মুখে পড়েছে।
এনজিও কর্মী কৃষ্ণপদ মুন্ডা বলেন, শ্যামনগর উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার আদিবাসী রয়েছে। আদিবাসীরা প্রাকৃতিক গাছ গাছড়া দিয়ে চিকিৎসা করাতে অভ্যস্ত। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্লাবিত হওয়ার কারণে গাছগুলো উপড়ে যেয়ে নষ্ট তো হয়ই, একই সাথে পরে আর জন্মানোর সম্ভাবনা থাকে না।
শিক্ষক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কিশোরী মেয়েরা তাদের পিরিয়ড কালীন সময়ে লবণ পানি ব্যবহারে নানাবিধ চর্মরোগসহ বিভিন্ন ত্বকের সমস্যায় ভুগছে। অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কৃষাণী আনন্দিনী মুন্ডা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের জমিজমা সব নদীগর্ভে চলে যায়। আমরা আমাদের সন্তান-সন্ততি নিয়ে বসবাস করতে পারি না।
উপকূলীয় অঞ্চলের অধিবাসীদের দুঃখ-দুর্দশার, নিরাপত্তা ও ক্ষয়ক্ষতির কথা শোনার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন বলেন, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে ব্যতিক্রমধর্মী এই আয়োজন সত্যিই আমাদেরকে এই অঞ্চলের মানুষের প্রকৃত সমস্যার কথা শোনা এবং তার সমাধান কল্পে গৃহীত পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আমরা আপনাদের সমস্যার কথা শুনেছি। সেই অনুযায়ী বাল্য বিবাহ রোধ, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ, ঘেরের গাইড বাঁধগুলো ১০ ফুট দূরে নির্মাণসহ মৎস্য এবং সবজি চাষের জন্য উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে।
প্রধান অতিথি এস.এম আতাউল হক দোলন বলেন, এই অঞ্চলের মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা আমরা জনপ্রতিনিধিরা শুনলেও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ খুবই কম জানতে পারে। আমরা চাই এখানকার মানুষের সমস্যা লাঘবের জন্য আপনারা পিপি রেডি করে সেই অনুযায়ী কাজ করবেন। যারা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পাওয়ার যোগ্য, তারা যেন অবশ্যই পায়। প্রতিবন্ধী, নারী, গর্ভবতী, বৃদ্ধ তারা যেন অবশ্যই তাদের প্রাপ্যগুলো পায়। আমরা শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার ক্ষয়ক্ষতির নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিরাপত্তাসহ এখানকার সমস্যা নিরুপণে কাজ করবো।