ইউরোপের দেশ আলবেনিয়ার নেতা আনোয়ার হোজা একবার চীনের নেতা মাও সে–তুংয়ের কাছে চিঠি লিখলেন, ‘কমরেড, আমার দেশের মানুষ না খেয়ে আছে। অতি দ্রুত খাবার পাঠান।’ জবাবে কমিউনিস্ট মিত্রকে মাও লিখলেন, ‘কমরেড আনোয়ার, আমাদের দেশের অবস্থা বিশেষ ভালো নয়। খাবার পাঠাতে পারছি না। দয়া করে আপনার লোকদের বলুন, কোমরের বেল্ট শক্ত করে এঁটে বাঁধতে। এতে ক্ষুধার কিছুটা উপশম হতে পারে।’ এবার আনোয়ারের পাল্টা চিঠি, ‘কমরেড মাও। আমাদের দেশে বেল্টও নেই। দয়া করে বেল্ট পাঠান।’
গল্পটি স্নায়ুযুদ্ধকালের। তবে একালে মিয়ানমারের অবস্থাও কাছাকাছি। দেশটির সামরিক জান্তা সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং কোনো বন্ধুদেশের কাছে এমন চিঠি লিখেছেন কি না জানা যায়নি। তবে তিনি জনগণকে কম খেতে বলছেন। কারণ, কম খাওয়া নাকি স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো!
শুরুতে দেশটির একজন সাধারণ মানুষের গল্প শুনে আসা যাক। মিয়ানমারের সাবেক রাজধানী ইয়াঙ্গুনে একটি অফিসে চাকরি করেন ৩৫ বছর বয়সী মা আয়ে। সকালে অফিসে গিয়ে পাশের কোনো চায়ের দোকান থেকে নাশতাটা সেরে নিতেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁকে দীর্ঘদিনের অভ্যাস বদলে ফেলতে হয়েছে। এখন তিনি সকালে নাশতা করেন না, দুপরের খাবারটা একটু আগে খেয়ে নেন, যা তিনি তৈরি করে নিয়ে আসেন বাসা থেকে। এভাবে এক বেলা না খেয়ে কিছুটা ব্যয় সাশ্রয় করছেন এই নারী। মা আয়ে তবু নিজেকে ধন্যবাদ দেন, কারণ তার চাকরিটা এখনো টিকে আছে। চোখের সামনে দেখেছেন চাকরি হারিয়ে সহকর্মীদের অনেকে বেকার হয়ে গেছেন।
সবুজঘেরা দেশ মিয়ানমার। বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিবেশী। বনজ ও খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ দেশটির জনসংখ্যা সাড়ে পাঁচ কোটি। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর দীর্ঘ সেনাশাসনে পিষ্ট দেশটি। স্বাধীনতার আগে ব্রিটিশরা, স্বাধীনতার পরে রাশিয়া দেশটির বেশ কিছু অবকাঠামো তৈরি করে দেয়। পরবর্তী সময়ে চীন ও ভারত দেশটিতে বিনিয়োগ করে। তবে এসব বিনিয়োগে দেশটির সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এর মধ্যে ২০১৫ সালে গণতান্ত্রিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত ছিল দেশটির। চীন, রাশিয়া, ভারত, জাপান ও জার্মানির কিছু বড় বড় প্রতিষ্ঠান সে দেশে গিয়েছিল ব্যবসা খুলতে। কিন্তু ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আবার অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সামরিক শাসন জারি করেন সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং। এরপর দেশটির ওপর নেমে আসে পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক অবরোধ। স্থগিত হয়ে যায় বৈদেশিক সহায়তা। অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী তাদের লগ্নি প্রত্যাহার করে নেয়।