বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে গত বারো বছর ধরে ক্রমাগত পশ্চিমি দুনিয়ার যাবতীয় কটাক্ষ, বিদ্রুপের জবাব দেওয়ার রাত। চোখে-চোখ রেখে জবাব দেওয়া। প্রমাণ করা— হ্যাঁ, কাতারও পারে বিশ্বকাপ সফল ভাবে আয়োজন করতে।
কাতারই পারে নিজেদের সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে অবলম্বন করে গোটা বিশ্বের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে।
কাতার পারে ফুটবলারদের স্বার্থে বাতানুকূল স্টেডিয়াম গড়ে তুলতে। কিন্তু তাতে কি বিতর্কে ইতি টানতে পারলেন আয়োজক কমিটির সদস্যেরা? বহির্বিশ্বের প্রতিক্রিয়ার ধরন দেখে মনে হচ্ছে, বিষয়টা এত সহজ নয়। আগামী এক মাস মাঠে এবং মাঠের বাইরে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা দিয়ে যেতে হবে কাতারকে।
রবিবার আল বায়েত স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেও ইংল্যান্ডের একটি সংবাদমাধ্যম দাবি করতে শুরু করে, কাতারের একটি সংস্থায় কর্মরত ভারত ও ফিলিপিন্সের ২০৫ জন পুরুষ এবং সাত জন মহিলা কর্মীকে নাকি সকাল ১০টা নাগাদ স্টেডিয়ামে নিয়ে আসা হয় বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখানোর জন্য। কিন্তু বিকেল চারটে পর্যন্ত তাঁদের স্টেডিয়ামের বাইরে প্রচণ্ড রোদের মধ্যে বসিয়ে রাখা হয়। দেওয়া হয়নি খাবার এবং জলও। বিশ্বকাপের বোধনের মুহূর্তেও নাকি লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। একই অভিযোগে শাকিরা-সহ একাধিক তারকা নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে। কাতারের রক্ষণশীল মানসিকতা নাকি ফুটবলপ্রেমীদের স্বতঃস্ফূর্ততা ও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে! এমনও বলা হয়েছে, এই বিশ্বকাপ উল্লাসের নয়, হবে আতঙ্কের।
তেমনই সুর শোনা গিয়েছে প্রাক্তন ইংল্যান্ড তারকা গ্যারি নেভিলের গলায়। তিনি যেমন মনে করেন, পশ্চিম এশিয়ার বিশ্বকাপ আয়োজন করার অধিকার রয়েছে— তেমনই মনে করেন, উপসাগরীয় দেশগুলির আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত মানবাধিকার রক্ষার বিষয়ে। নেভিল বলছেন, “ফিফা প্রেসিডেন্ট যে ভাষায় শনিবার সমালোচকদের জবাব দিয়েছেন, সেটা ফুটবলের অগ্রগতির পক্ষে অত্যন্ত খারাপ বিজ্ঞাপন। নিজেকে পরিযায়ী শ্রমিকের সঙ্গে তুলনা করে তিনি কাতারের শাসক গোষ্ঠীকে খুশি করতে গেলেন, না কি শ্রমিকদের বেঁচে থাকার অধিকারকে বিদ্রুপ করলেন? ওঁর কথার মধ্যে আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ঔদ্ধত্য দেখতে পেলাম।” একই বক্তব্য আর এক প্রাক্তন তারকা গ্যারি লিনেকারেরও।
প্রশ্ন সঙ্গী করেই তাই উদ্বোধন হল মহাযুদ্ধের। এবং বিশ্বকাপের উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে এর আগে যে উন্মাদনা প্রতি চার বছর অন্তর দেখা গিয়েছে, তার পুনরাবৃত্তিই চোখে পড়ল