সাতক্ষীরা শহরের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, কিশোর গ্যাং বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়েছে। কিশোর অপরাধীরা ‘গ্যাং’ বা গ্রুপ সৃষ্টি করে বিভিন্ন অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। জড়িয়ে পড়ছে ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে। এই কিশোররা সমাজের মধ্যে নিজেদের মতো করে নতুন এক সমাজ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। কিশোর অপরাধীরা আবার বিভিন্ন গ্যাং এর মাধ্যমে তথাকথিত ‘বড় ভাইদের’ আস্কারা পেয়ে অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। প্রশাসন এ অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার পরও কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধীদের কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। সারাদেশের ন্যায় সাতক্ষীরাতেও বেড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত। কিশোর গ্যাংয়ের কবল থেকে রক্ষা পেতে পুলিশ ও র্যাব এর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন অভিভাবক মহল। সরেজমিনে দেখা গেছে, শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক এলাকায় কিশোরদের আড্ডাবাজি চলছে। স্কুলছাত্রীদের ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে। এছাড়া পাড়া মহল্লার রাস্তায় দলবদ্ধভাবে আড্ডা দেয়। এমন কি বিভিন্ন সময় অভিভাবকদেরও নানা ধরনের হুমকি দিয়ে আসছে। তাদের উৎপাতের ভয়ে কেউ কারও কাছে মুখ খুলতে সাহস পায় না। শুধু শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে না, এমন চিত্র দেখা গেছে সরকারী কলেজ মোড়, গালস্ স্কুল এলাকাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে।
চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় খুলনা নর্দান ইউনির্ভাসিটিতে বি,বি,এ (অনার্স) ২য় বর্ষের ছাত্র রেদওয়ান হাসিব পিটিয়ে জখম করেছে কিশোর গ্যাং। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে আনিয়া ভর্তি করেন। শহরের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে এ ঘটনায় বুধবার রাতে রেদওয়ান হাসিবের মাতা এড. মোছাঃ উম্মে হাবিবা সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি মামলা করেছেন। আসামিরা হলেন ১। কামাল (২০), ২। ইসরাফিল (২৮), ৩। মিলন (২০), ৪। নূর হোসেন (২০), ৫। হাবিবুল্লাহ সর্বসাং- সুলতানপুর। মামলা সূত্রে জানা গেছে, ঈদের ছুটিতে বাড়ীতে আসেন খুলনা নর্দান ইউনির্ভাসিটিতে বি,বি,এ (অনার্স) ২য় বর্ষের ছাত্র রেদওয়ান হাসিব (২১)। তবে ইসরাফিল (২৮) জন্মদিন পালন উপলক্ষ্যে দশ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করেন রেদওয়ান হাসিবের কাছে। চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করায় বুধবার (১৭ এপ্রিল) হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় লোহার রড দিয়ে জখম করা হয়েছে। রেদওয়ান হাসিবের মাতা এড. মোছাঃ উম্মে হাবিবা বলেন, আসামীরা পরস্পর একদলীয়, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, কিশোর গ্যাং এর সদস্য। ২নং আসামী অন্যান্য আসামীদের নিয়ে কিশোর গ্যাং পরিচালনা করে এবং শহরের বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজী এবং ছিনতাইয়ের কাজে নিয়োজিত থাকে। আমার পুত্র রেদওয়ান হাসিব (২১) খুলনা নর্দান ইউনির্ভাসিটিতে বি,বি,এ (অনার্স) ২য় বর্ষের ছাত্র। সে ঈদের ছুটিতে বাড়ীতে আসিলে ৪নং আসামীর জন্ম দিন পালন উপলক্ষ্যে আসামীরা আমার পুত্রের নিকট ১০,০০০/- টাকা চাঁদা দাবী করে। আমার পুত্র চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করায় আসামীরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার পুত্রকে মারপিট করবে বলে হুমকী দিতে থাকে। এমতাবস্থায় গত ইং ১৭ এপ্রিল আসামীরা আমার পুত্রকে ফোন করে বেলা ১২টার সময় সাতক্ষীরা শহরের রাজ্জাক পার্কের মধ্যে শিল্পকলা একাডেমির সামনে ডেকে নিয়ে আসে। আমার পুত্র ঘটনাস্থলে হাজির হওয়ার সাথে সাথে আসামীরা বলে তোর নিকট ৪নং আসামীর জন্মদিন পালন করার জন্য ১০,০০০/- টাকা চাঁদা চেয়েছিলাম। চাঁদার টাকা এনেছিস কিনা। আমার পুত্র চাঁদার টাকা আনে নাই বলার সাথে সাথে ২নং আসামী অপরাপর আসামীদের হুকুম দিয়ে বলে ওকে আজ মেরে খুন করে ফেল। এই সময় ১নং আসামী তাহার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার পুত্রের মাথায় বাড়ী মারিলে উক্ত বাড়ী আমার পুত্রের ডান চোখ ও চোখের কোনায় লাগিয়া হাড় ভাঙ্গা গুরুতর জখম সহ ডান চোখটি নষ্ট হইবার উপক্রম হইয়াছে। (তিনটি সেলাই যুক্ত) ৩নং আসামী এই সময় হত্যার উদ্দেশ্যে আমার পুত্রের মাথায় লোহার রড দিয়ে বাড়ী মারিলে উক্ত বাড়ী আমার পুত্রের ঠোটের ডান পার্শ্বে লাগিয়া রক্তাক্ত জখম হয়। যাহার কারণে আমার পুত্রের মুখের একটি দাঁত ভাঙ্গিয়া গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। ৪নং আসামী এই সময় হত্যার উদ্দেশ্যে তাহার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে আমার পুত্রের মাথায় বাড়ী মারিলে উক্ত বাড়ী আমার পুত্রের ডান হাতের কজির নিচে লাগিয়া গুরুতর হাড়ভাঙ্গা জখম হয়। ২নং আসামী জিআই পাইপ দিয়ে আমার পুত্রের মৃত্যু নিশ্চিত করিবার মানসে মাথায় বাড়ী মারিলে উক্ত বাড়ী আমার পুত্রের ঘাড়ে লাগিয়া গুরুতর হাড়ভাঙ্গা জখম হয়। আমার পুত্র পড়িয়া গেলে আসামীরা এই সময় আমার পুত্রের মৃত্যু নিশ্চিত করিবার মানসে সমস্ত শরীরে লোহার রড এবং জিআই পাইপ দিয়ে এলোপাতাড়ী ভাবে মারপিট করে জখম করে। এই সময় ২নং আসামী আমার পুত্রের পকেটে থাকা ২,০০০/- টাকা জোর পূর্বক চাঁদা বাবদ নিয়ে নেয়। স্বাক্ষীরা সহ আশেপাশের লোকজনের প্রতিরোধের মুখে আসামীরা এই সময় আমার পুত্রকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলিয়া রাখিয়া চলিয়া যায়। যাইবার সময় আসামীরা বলে যে, আমার পুত্র যদি তাহাদের দাবীকৃত চাঁদার টাকা না দেয় তাহলে আসামীরা আমার পুত্রকে খুন করিয়া লাশ গুম করিবে। স্বাক্ষীরা সহ আশেপাশের লোকজন পথ চলতি ইজি ব্যাক যোগে আমার পুত্রকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আনিয়া ভর্তি করে। আমি খবর পাইয়া বিষয়টি আমার পুত্র সহ স্বাক্ষীদের নিকট শুনিয়া এবং আমার পুত্রের চিকিৎসার কাজে ব্যস্ত থাকায় আপনার থানায় হাজির হয়ে এজাহার দায়ের করিতে সামান্য বিলম্ব হইল। বর্তমানে আমার পুত্র সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে গুরুতর জখমী অবস্থায় মৃত্যুর সহিত পাঞ্জা লড়িতেছে। আসামীরা মাদক, ছিনতাই, চাঁদাবাজী সহ একাধিক মামলায় আসামী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানায়।