ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ্র-এমপি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার দেশের নদ-নদী রক্ষায় বদ্ধপরিকর। একই সাথে দেশের কৃষি জমিও রক্ষা করতে সরকার আইন করবে। কৃষি জমি যাতে অন্যখাতে ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য সরকার ইতোমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দেশের মানুষের খাদ্য আসে ওই কৃষি জমি থেকে। কৃষি জমি না থাকলে মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগবে। এজন্য কেউ ইচ্ছা করলেই যাতে কৃষি জমিতে ঘরবাড়ি না বানাতে পারে এবং কৃষি জমি নষ্ট করতে না পারে সেজন্য সরকার একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। নদীর সাথে রয়ে এদেশের মানুষের গভীর মিতালী। নদী থেকে জন্ম হয়েছে সভ্যতার। নদী না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না। মানব সভ্যতা বাঁচবে না। তাই নদী বাঁচাতে সরকার ইতোমধ্যে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল উপকূল অঞ্চলের নদ-নদী আজ হুমকির মুখে। খুলনা বিভাগের অনেক নদ-নদী আজ বিলুপ্তির পথে। এসব নদ-নদীর প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে হলে নদী শাসন বন্ধ করতে হবে। কপোতাক্ষ অববাহিকায় টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়নের সকল প্রতিবন্ধকতা দুর করতে হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে টিআরএম-এর উপযোগিতা সম্পর্কে ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরতে হবে। যেভাবেই হোক নদী রক্ষা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আলোচনা করে টিআরএম প্রকল্পের উপকারীতা সম্পর্কে বোঝাতে হবে। এজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ-এমপি।
শনিবার (২০ এপ্রিল) সকালে খুলনা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল অঞ্চলের নদ-নদী রক্ষা বিষয়ক সমাবেশ ও নদীমেলা উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
উত্তরণের পরিচালক শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য ফিরোজ আহমেদ স্বপন, সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশু, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য লায়লা পারভীন সেঁজুতি, খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. রশীদুজ্জামান, যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য এনামুল হক বাবুল, পানি কমিটির হাশেম আলী ফকির প্রমুখ। আরও বক্তব্য রাখেন সিইজি আআইএস উপনির্বাহী মোতালেব হোসাইন সরকার, আইডব্লিউএমের পরিচালক সোহেল মাসুদ, বাপাউবোর দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার সাহা প্রমুখ। এছাড়া অনুষ্ঠানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ও পানি বিশষেজ্ঞগণ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মনিরুজ্জামান জোয়ারদার।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফিরোজ আহমেদ স্বপন-এমপি বলেন, খননের নামে নদীকে খাল বানানো প্রকল্প বাতিল করতে হবে। নদীর প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে সকল নদীর বাঁধ ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। নদী শাসন বন্ধ করতে হবে। নদীর বুকে জেগে ওঠা চর যাতে কেউ দখল করতে না পারে সেজন্য সকলকে সজাগ থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি জলাবদ্ধতা নিরসনে কপোতাক্ষ পাড়ের জলাধার প্রকল্প বাস্তবায়নে সকল প্রতিবন্ধকতা দুর করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আশরাফুজ্জামান আশু-এমপি বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সাতক্ষীরা-খুলনাসহ আশেপাশের জেলাগুলো আজ ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে আক্রান্ত। সামান্য বৃষ্টি হলেই শহরে জমে হাঁটু পানি। পানি নিষ্কাশনের সকল পথ আজ রুদ্ধ। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে নদ-নদী খনন ও টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই। নদী রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে আমাদের পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই নদ-নদী রক্ষার মধ্য দিয়ে দেশের মানুষকে বাঁচানোর আহ্বান জানান এমপি আশু।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে লায়লা পারভীন সেঁজুতি-এমপি বলেন, খুলনা বিভাগের চারটি জেলায় বিশেষ করে খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর ও বাগেরহাটের নদ-নদীগুলো অস্তিত্ব সংকটে। সব নদীর মোহনা আজ অবরুদ্ধ। নদীর প্রবাহ সচল রাখতে না পারলে আমাদের সভ্যতা টিকবে না। তিনি আরও বলেন, সরকার নদী রক্ষায় কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে অথচ জনগণ তার সুফল পাচ্ছে না। পরিকল্পনার অভাবে সরকারের টাকা অপচয় হচ্ছে। এজন্য স্থানীয় অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সরকারে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে স্বচ্ছতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে কপোতাক্ষ অববাহিকার জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রশীদুজ্জামান-এমপি বলেন, আগামী প্রজন্মের জন্য বসবাসযোগ্য একটি সুন্দর পৃথিবী আমাদের সবার কাম্য। কিন্তু নদী না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না। নদী রক্ষায় সরকারের কোন গাফিলতি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন টিআরএম বাস্তবায়নে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রশীদুজ্জামান-এমপি বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলকে রক্ষা করতে হলে সকল নদীর প্রবাহ ফিরিযে আনতে। জোয়ার-ভাটার ব্যবস্থা করতে হবে। নদী শাসন বন্ধ করতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে আরও কার্যকরি ভূমিকা পালন করতে হবে।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ৩৫বছর মেয়াদি উদ্যোগে কপোতাক্ষ নদের নিম্নাংশের (ডাউন স্ট্রিম) খাট বিলে (পাখিমারা, হরিহরনগর, রাজাপুর, হরিণখোলা, দলুয়া ও জালালপুর) পলি ব্যবস্থাপনা, জোয়ার ও অটোয় প্রবাহিত নিট পানির পরিমাণ (টাইডাল প্রিজম) বাড়ানো ও নিষ্কাশন ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জোয়ার-ভাটা নদী ব্যবস্থাপনা (টিআরএম) কার্যক্রম চালানো হবে। এছাড়া এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ড্রেজিং করে নদীর গভীরতা বৃদ্ধি (ক্যাপিটাল ড্রেজিং), খাল খনন ও নদীর পাড়ে স্বল্প-উচ্চতার বাঁধ নির্মাণ ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এর আগে নদী মেলা উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ-এমপি।
প্রসঙ্গত: সারাদেশে ৩০৮টি নদী নাব্যতা হারিয়েছে। বাংলাদেশে ৯৩১টি নদী প্রবাহমান রয়েছে এবং নাব্যতা হারিয়েছে এমন নদীর সংখ্যা ৩০৮টি। ঢাকা বিভাগে নাব্যতাহীন নদীর সংখ্যা ৮৫, রংপুর বিভাগে ৭১, রাজশাহী বিভাগে ১৮, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১, সিলেট বিভাগে ১০, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৬ এবং খুলনা বিভাগে ৮৭টি।’ তথ্যমতে বাংলাদেশে বর্তমানে মোট নদীর সংখ্যা ১হাজার ৮টি। পরবর্তী সময়ে জেলা প্রশাসক ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে আরও নদীর সংখ্যা পাওয়া গেছে। প্রক্রিয়াটি চলমান রয়েছে।